সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আকাশপথের ভ্রমণ করে ফেলা হয়েছে আরও কঠিন। এখন থেকে দেশটিতে আকাশপথে যাওয়া এবং বের হওয়া উভয় ক্ষেত্রেই প্রত্যেক যাত্রীকে যাত্রা শুরুর ৪৮ ঘণ্টা আগের কোভিড ১৯ আরটি-পিসিআর টেস্টের নেগেটিভ রিপোর্ট জমা দিতে হবে। বাংলাদেশসহ অন্য যেকোনো দেশে ভ্রমণ বা দেশটিতে ঢোকার ক্ষেত্রে এই নিয়ম কার্যকর হবে। গতকাল শুক্রবার থেকেই নতুন এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে বলে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাংলাদেশ দূতাবাসের একাধিক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন।

এদিকে দেশটির নেওয়া নতুন এই সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক উল্লেখ করে তার কারণ জানতে চেয়েছে বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্র্তৃপক্ষ (বেবিচক)। দুই এক দিনের মধ্যে এ ব্যাপারে আরব আমিরাতের ব্যাখ্যা বা জবাব পাওয়া যেতে পারে বলে জানিয়েছে বেবিচক। জানা গেছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে বাংলাদেশসহ অন্য যেকোনো দেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট যাত্রীকে কভিড ১৯ পিসিআর টেস্ট নেগেটিভ রিপোর্ট সংগ্রহ করতে হবে। আর ফ্লাইটের ৪৮ ঘণ্টা আগের রিপোর্ট দিতে হবে। এর আগে এই রিপোর্ট জমা দেওয়ার মেয়াদ ছিল ৯৬ ঘণ্টা। তারপর করা হয় ৭২ ঘণ্টা। এখন থেকে ৪৮ ঘণ্টা আগের রিপোর্ট দিতে হবে।

ঢাকায় এমিরেটস এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তারা জানান, আমিরাতের জেনারেল সিভিল এভিয়েশন অথরিটি (জিসিএএ) দেশটিতে চলাচলকারী বিমান সংস্থাগুলোর জন্য কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এখন থেকে কোনো বিমান সংস্থার ফ্লাইটে করোনা পজিটিভ যাত্রী পেলে ওই বিমান সংস্থাকে নিজ খরচে যাত্রীকে ফেরত আনতে হবে।

আর এ ঘটনা দ্বিতীয়বার ঘটলে ১৫ দিনের জন্য সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বাতিল এবং নতুন করে অবতরণের অনুমতি নিতে হবে। এই বিধিনিষেধ আরোপের কারণ জানতে চেয়ে জিসিএএকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন। সংযুক্ত আরব আমিরাতে গেল জুলাই মাসে ফ্লাইট চালুর শুরু থেকেই নিবন্ধনের জটিলতা এবং দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগের ছাড়পত্র না পাওয়ায় শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে ফেরত যান অনেক প্রবাসী।

গত কয়েক দিনে ঘন ঘন নীতি পরিবর্তন ও আবুধাবি বিমানবন্দর থেকে শতাধিক যাত্রী ফেরত পাঠানোর ঘটনায় সংকটে পড়ে বিমান সংস্থাগুলো। বাধ্য হয়ে আবুধাবি ফ্লাইট বাতিল করেছে বাংলাদেশ বিমান। এ অবস্থায় দেশটিতে ফ্লাইট চালানো নিরুৎসাহিত করতে ইউএই সিভিল এভিয়েশন নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ করল।

জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্র্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান  বলেন, প্রত্যেক দেশের নিজস্ব রেগুলেশন থাকতে পারে, সেটা মানাও এয়ারলাইন্সগুলোর জন্য বাঞ্ছনীয়। কিন্তু দেখতে হবে এটা কতটা যৌক্তিক। সেজন্য সিভিল এভিয়েশন থেকে আরব আমিরাত সিভিল এভিয়েশনের কাছে চিঠি লিখে যৌক্তিক ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।

নতুন এই বিধিনিষেধের দরুন আরব আমিরাতে ভ্রমণ করা আরও দুরূহ হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ আশীষ রায় চৌধুরী। তিনি দেশ  বলেন, একদিকে করোনার তান্ডবে গোটা পৃথিবীর এভিয়েশনে ধস নেমেছে। কভিড আতংকে বাংলাদেশ বিমানসহ দুনিয়ার শীর্ষ এয়ারলাইন্সগুলো বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে। মাস দুয়েক আগে আমিরাতসহ অনেক দেশই সীমিত আকারে শিডিউল ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করেছে।

নতুন স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ফ্লাইট পরিচালনা করা হচ্ছে। এর অন্যতম শর্ত হিসেবে করোনার নেগেটিভ সনদ প্রদর্শন বাধ্যতামূলক করা হয়। প্রথমে ৯৬ ঘণ্টা, পরে সেটা কমিয়ে ৭২ ঘণ্টা করার পর অনেক দেশেই তা প্রত্যাহার করা হয়। এমন সময় আরব আমিরাত সেটা আরও কমিয়ে ৪৮ ঘণ্টা করায় এখন যাত্রীদের জন্য তা খুবই জটিল ও কঠিন হয়ে পড়বে। 

তিনি আরও বলেন, একজন যাত্রী টিকিট কাটার পর আমিরাত থেকে নিজ দেশে ফিরতে গিয়ে যদি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে করোনার সনদ সংগ্রহ করতে না পারে, তাহলে তার যাত্রা বাতিল হয়ে যাবে। আবার যদি কোনো যাত্রীর করোনা পজিটিভ থাকে ধরা পড়লে ওই এয়ারলাইন্সকে ১৫ দিনের জন্য স্থগিত করা হবে। এমন কঠোর বিধিনিষেধ যদি অন্য দেশগুলোও আরোপ করে, তাহলে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে! এসব বিষয়ে আরব আমিরাতের আরও নমনীয় ও সহনীয় হওয়া উচিত। তবে আমার মনে হয় এসবই সাময়িক।