শর্ত সাপেক্ষে চালু হয়েছে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) গত ১ মে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর ঘোষণা দেয়। তবে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করে ৩৮টি দেশে যাওয়া-আসার ওপর শর্ত আরোপ করেছে সংস্থাটি। গত ১৪ এপ্রিল থেকে করোনা সংক্রমণ রোধে  বাংলাদেশের সব আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ ছিল। প্রবাসী কর্মীদের কথা বিবেচনা করে ১৭ এপ্রিল থেকে পাঁচটি দেশে ফ্লাইট চালু হয়। পরে এই তালিকায় যুক্ত হয় আরো কয়েকটি দেশ। 

মহামারীর সংক্রমণের ঝুঁকি বিবেচনা করে বিশ্বের সব দেশকে তিনটি গ্রুপে ভাগ করেছে বেবিচক। গ্রুপ-এ হচ্ছে অতি ঝুঁকিপূর্ণ, গ্রুপ-বি হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ, গ্রুপ সি হচ্ছে সাধারণ। বেবিচকের অতি ঝুঁকিপূর্ণ (গ্রু-এ) দেশের তালিকায় রয়েছে ১২টি দেশ। ঝুঁকিপূর্ণ (গ্রুপ-বি) দেশের তালিকায় রাখা হয়েছে ২৬টি দেশের নাম।

অতি ঝুঁকিপূর্ণ (গ্রু-এ) ১২টি ও ঝুঁকিপূর্ণ (গ্রুপ-বি) ২৬টিসহ ৩৮টি দেশ ছাড়া বিশ্বের বাকি দেশ রয়েছে গ্রুপ-সি’তে। বেবিচকের সদস্য (ফ্লাইট সেফটি অ্যান্ড রেগুলেশন) গ্রুপ ক্যাপ্টেন চৌধুরী মোহাম্মদ জিয়াউল কবীর বলেন, সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসারে নতুন নিয়ম করা হয়েছে। এটি ১ মে থেকে কার্যকর হয়েছে।

স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট দফতরের পরামর্শে অতি ঝুঁকিপূর্ণ, ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকা করা হয়েছে। তাদের পরামর্শে কোয়ারেন্টিন সংক্রান্ত বিধিনিষেধও তৈরি করা হয়েছে। বিদেশে থেকে বাংলাদেশে আসতে এবং বাংলাদেশ থেকে বিদেশে যেতে করোনা পিসিআর পদ্ধতিতে করোনা টেস্ট বাধ্যতামূলক ১০ বছরের নিচের বাচ্চাদের টেস্ট করার প্রয়োজন নেই। ফ্লাইটের ওঠার ৭২ ঘণ্টা আগে করোনা টেস্টে নেগেটিভ ফলাফল এলেই দেশে আসা বা বিদেশে যাওয়া যাবে। 

অন্যদিকে করোনার জন্য ভ্যাকসিন গ্রহণের পরও বিধিনিষেধ মানতে হবে। পাওয়া যাবে না আলাদা কোনও ছাড়।স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ভ্যাকসিন নিলে কেউ করোনায় আক্রান্ত হননি এমন নজির নেই। ভ্যাকসিন নিলেও করোনা আক্রান্ত হতে পারেন যেকেউ।ফলে কোয়ারেন্টিনের বিধিনিষেধ মানতে হবে সবাইকে।

বেবিচকের হিসাবে অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ১২টি দেশ ‘গ্রুপ-এ’তে রয়েছে- আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, কলম্বিয়া, কোস্টারিকা, সাইপ্রাস, জর্জিয়া, ভারত, ইরান, মঙ্গোলিয়া, ওমান, সাউথ আফ্রিকা ও তিউনিসিয়া।

বেবিচক জানিয়েছে, এসব দেশ থেকে কোনও যাত্রী বাংলাদেশে আসতে পারবেন না এবং বাংলাদেশ থেকেও এই ১২ দেশে যাওয়া যাবে না। তবে সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে এই ১২ দেশে ১৫ দিনের মধ্যে ভ্রমণকারী (বসবাসকারী নয়) বাংলাদেশি নাগরিক দেশে আসতে পারবেন। এক্ষেত্রে তাদের সরকার নির্ধারিত হোটেলে নিজ খরচে বাধ্যতামূলক ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। আগাম হোটেল বুকিং করতে হবে  ফ্লাইটে ওঠার আগেই, যা বোডিং কার্ড ইস্যুর সময় চেক করবে এয়ারলাইন্সগুলো।

বাংলাদেশের প্রচুর মানুষ ভারতে যান চিকিৎসার জন্য। অতি ঝুঁকিপূর্ণ তালিকা থাকায় আপাতত দেশটি থেকে বাংলাদেশিদের আসতে হলে আগে থেকে অনুমতি নিতে হবে। এছাড়া ওমান, সাউথ আফ্রিকা এ তালিকায়। এ দুটি দেশে অনেক প্রবাসী কর্মী বসবাস করেন। ইতোমধ্য বাংলাদেশ থেকে যাত্রী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ওমান সরকার। অন্যদিকে বাংলাদেশও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ফলে দেশটিতে আপাতত প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছেন না প্রবাসী কর্মীরা।

অন্যদিকে বাংলাদেশে ফেরতে হলেও তাদের আগে থেকে অনুমিত নিতে হবে সরকাররে কাছ থেকে। তুলনামূলক কম ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকা করা হয়েছে ‘গ্রুপ-বি’তে। সেখানে রয়েছে ২৬টি দেশ। এগুলো হচ্ছে- অস্ট্রিয়া, আজারবাইজান, বাহরাইন, বেলজিয়াম, চিলি, ক্রোয়েশিয়া, এস্তোনিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রিস, হাঙ্গেরি, ইরাক, কুয়েত, ইতালি, লাটভিয়া, লিথুনিয়া, নেদারল্যান্ড, প্যারাগুয়ে, পেরু, কাতার, স্লোভেনিয়া, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, তুরস্ক ও উরুগুয়ে।

বেবিচক জানিয়েছে, এই তালিকার দেশগুলো থেকে বাংলাদেশে আসা যাবে। তবে যাত্রীদের সরকার নির্ধারিত হোটেলে নিজ খরচে বাধ্যতামূলক ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। বিদেশে ফ্লাইটে ওঠার আগেই হোটেল বুকিং করতে হবে, যা বোডিং কার্ড ইস্যুর সময় চেক করবে এয়ারলাইন্সগুলো।

ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় থাকলেও শর্ত শিথিল করা হয়েছে বাহরাইন, কুয়েত ও কাতারের ক্ষেত্রে। ১৪ দিনের বদলে তিন দিন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে এই তিন দেশ থেকে এলে। প্রবাসীরা  সরকারি কোয়ারেন্টিন সেন্টারে থাকার সুবিধা পাবেন। তবে সেখানে জায়গা না থাকলে সরকার নির্ধারিত হোটেলে নিজ খরচে থাকতে হবে। এজন্য এয়ারলাইন্সগুলো বোডিং কার্ড ইস্যু করার আগে সরকারি কোয়ারেন্টিন সেন্টারে জায়গা খালি আছে কিনা তা যাত্রীকে নিশ্চিত করবে। খালি না থাকলে যাত্রীকে বোডিং কার্ড ইস্যুর আগেই হোটেলে বুকিং করতে হবে। দেশে আসার তিনদিন পর করোনা টেস্ট করানো হবে যাত্রীদের। রিপোর্ট নেগেটিভ এলে তারা বাকি ১১ দিন বাড়িতে গিয়ে কোয়ারেন্টিনে থাকবেন।

বেবিচক গ্রুপ-এ’তে থাকা ১২টি এবং ‘গ্রুপ-বি’তে থাকা ২৬টি অর্থাৎ মোট ৩৮টি দেশ ছাড়া বিশ্বের অন্য সব দেশকে এই গ্রুপের আওতায় রেখেছে। প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন না হলেও বাড়িতে বাধ্যতামূলক ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে এসব দেশ থেকে বাংলাদেশে এলে। ফলে সউদী আরব, আবুধাবি, দুবাই, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা যাত্রীরা বাড়িতে গিয়ে কোয়ারেন্টিনে থাকবেন।

তবে অতি ঝুঁকিপূর্ণ ১২টি এবং ঝুঁকিপূর্ণ ২৬টি, এই ৩৮টি দেশে ট্রানজিট হয়ে দেশে আসা কিংবা বিদেশ যাওয়া যাবে কিনা সে প্রশ্নে জানা যায় এক্ষেত্রে ট্রানজিট হয়ে বিদেশ যাওয়া বা আসা যাবে। তবে দেশে আসার ক্ষেত্রে অতি ঝুঁকিপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় থাকা ৩৮টি দেশে ট্রানজিট হয়ে এলে, কোনও অবস্থায় দেশটির ভেতরে প্রবেশ করা যাবে না। এয়ারলাইন্সের তত্ত্বাবধানে বিমানবন্দরের ভেতরেই থাকতে হবে যাত্রীদেরকে।